বছরের কোনো সময় দিন বড় থাকে আবার কোনো সময় রাত বড় থাকে। কখনো প্রচন্ড গরম অনুভূতি হয় আবার কখনো কন কনে শীত। পৃথিবীতে দিন রাত্রির হ্রাস বৃদ্ধি ও ঋতু পরিবর্তন বার্ষিক গতির ফলে ঘটে।
বার্ষিক গতি ( Annual Motion) : পৃথিবী একটি নির্দিষ্ট উপবৃত্তাকার কক্ষপথে, নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যের চারিদিকে পরিক্রমণ করছে। পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে পৃথিবীর এই পরিক্রমণ কে বার্ষিক গতি (annual motion) বলে।
সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড। এই সময় কে এক সৌর বছর বলা হয়। পৃথিবীর কক্ষপথের পরিধি ৯৩৮০৫১৮২৭ কিলোমিটার। সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর গড় গতিবেগ ১৮.৫ ৷ মাইল / সেকেন্ড বা ৬৬৫০০ মাইল / ঘন্টা অথবা ৩০ কিলোমিটার / সেকেন্ড বা ১০৬২৬০ কিলোমিটার / ঘন্টা।
অনুসূর ( perihelion) : পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষে সূর্যকে পরিক্রমণ করতে করতে জানুয়ারির ১ থেকে ৩ তারিখে সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সবচেয়ে কম থাকে একে পৃথিবীর অনুসূর অবস্থান বলে।
অপসূর (aphelion): পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে পরিক্রমণ করতে করতে ১ থেকে ৩ বা ৪ জুলাই তারিখে সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সবচেয়ে বেশি থাকে, একে পৃথিবীর অপসূর অবস্থান বলে।
দিবা রাত্রির হ্রাস বৃদ্ধির কারণঃ নিরক্ষরেখায় সারা বছর দিবা রাত্রি সমান থাকে। কিন্তু বার্ষিক গতির কারণে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে দিন রাতের কম বেশি হয়। সূর্যকে পরিক্রমণকালে কক্ষপথে পৃথিবীর চারটি অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যথাঃ ২১ জুন , ২৩ সেপ্টেম্বর, ২২ ডিসেম্বর ও ২১ মার্চ।
২১ জুনঃ ২১ জুন তারিখে মধ্যাহ্ন ২৩.৫° উত্তর অক্ষাংশে সূর্য লম্ব ভাবে ( ৯০° কোণে) কিরণ দেয়। ফলে উত্তর মেরু সূর্যের দিকে সর্বাপেক্ষা বেশি ঝুঁকে থাকে এবং দক্ষিণ মেরু সূর্য থেকে সর্বপেক্ষা দূরে সরে পড়ে। তাই উত্তর গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড় ও রাত সব থেকে ছোট হয়ে থাকে। দক্ষিণ গোলার্ধে বিপরীত অবস্থা বিরাজ করে। সুমেরুবৃত্ত ( ৬৬.৫° উত্তর) থেকে উত্তর মেরু পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা দিন ও কুমেরুবৃত্ত ( ৬৬.৫° দক্ষিণ) থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা রাত থাকে।
২৩ সেপ্টেম্বরঃ ২১ জুনের পর উত্তর মেরু সূর্য থেকে দূরে সরতে থাকে। ফলে উত্তর গোলার্ধে ক্রমশ দিন ছোট ও রাত বড় হতে থাকে। ২৩ সেপ্টেম্বর সূর্যরশ্মি নিরক্ষরেখায় লম্ব ভাবে (৯০° কোণে) কিরণ দেয়। ফলে উভয় মেরু সূর্য থেকে সমান দূরে থাকে। তাই ২৩ সেপ্টেম্বর পৃথিবীর সর্বত্র দিন রাত সমান থাকে।
২২ ডিসেম্বরঃ ২৩ সেপ্টেম্বর পর থেকে দক্ষিণ মেরু সূর্যের নিকটবর্তী এবং উত্তরমেরু সূর্য থেকে দূরে যেতে থাকে। তাই দক্ষিণ গোলার্ধে দিনের পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং রাতের পরিমাণ কমতে থাকে। ২২ ডিসেম্বর সূর্য মকরক্রান্তি রেখায় লম্বভাবে কিরণ দেয়। তাই ২২ ডিসেম্বর দক্ষিন গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড় হয় এবং রাত সব থেকে ছোট হয়।
২১ মার্চঃ ২২ ডিসেম্বরের পর থেকে উত্তর মেরু ক্রমশ সূর্যের নিকটে আসতে থাকে। ২১ মার্চে পৃথিবী নিরক্ষরেখায় লম্বভাবে কিরণ দেয়। অর্থাৎ সূর্য থেকে উভয় মেরুর দূরত্ব সমদূরবর্তী হয়ে থাকে। তাই ২১ শে মার্চ ও ২৩ শে সেপ্টেম্বরের অনুরূপ দিন রাত সমান হয়ে থাকে। এই ভাবে পৃথিবীর বার্ষিক গতির জন্য দিন রাতের হ্রাস বৃদ্ধি হয়।
⚫ঋতু পরিবর্তনের কারণঃ
বার্ষিক গতির জন্য দিবা রাত্রির যেমন হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে তেমনি ঋতু পরিবর্তনেও বার্ষিক গতির ভূমিকা রয়েছে।
বার্ষিক গতির জন্য সূর্যরশ্মি কোথাও লম্বভাবে আবার কোথাও তির্যকভাবে পতিত হয়। সূর্য রশ্নি লম্বভাবে আপতিত হলে কম বায়ু স্তর ভেদ করে ফলে পৃথিবী পৃষ্ঠ অধিক উত্তপ্ত হয়। তির্যকভাবে পতিত হলে অধিক বায়ু স্তর ভেদ করে আসার প্রয়োজন হয়। তাই বছরে বিভিন্ন সময় পৃথিবী পৃষ্ঠে তাপমাত্রার তারতম্য ঘটে। পৃথিবীর চারটি অবস্থান থেকে ঋতু পরিবর্তনের ব্যাখ্যা দেওয়া হলো।
⚫উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল ও দক্ষিন গোলার্ধে শীত কালঃ ২১ শে জুন সূর্য কর্কটক্রান্তি রেখার উপর ৯০° কোনে অবস্থান করে। ২১ জুনের ১.৫ মাস পূর্ব থেকে ২১ শে জুনের ১.৫ মাস পর পর্যন্ত উত্তর গোলার্ধে উত্তাপ বেশি থাকে। ফলে উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল। দক্ষিণ গোলার্ধে বিপরীত অবস্থা বিরাজ করে অর্থাৎ সূর্য তীর্যক ভাবে কিরণ দেয়। তাই দক্ষিন গোলার্ধে তখন শীতকাল।
⚫উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে বসন্তকালঃ
২৩ সেপ্টেম্বর সূর্যরশ্মি নিরক্ষরেখার উপর ৯০° কোণে অর্থাৎ লম্বভাবে কিরণ দেয়। উভয়মেরু সূর্য থেকে সমদূরবর্তী হয়ে থাকে, সেই জন্য ২৩ সেপ্টেম্বর দেড়মাস পূর্ব থেকে দেড়মাস পর পর্যন্ত মোট ৩ মাস উত্তাপ মধ্যম ধরনের হয়ে থাকে। এই সময় উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে বসন্তকাল হয়ে থাকে।
⚫উত্তর গোলার্ধে শীতকাল ও দক্ষিন গোলার্ধে গ্রীষ্মকালঃ
২২ ডিসেম্বর সূর্য মকর ক্রান্তি রেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। ফলে দক্ষিণ গোলার্ধে উত্তাপ বেশি থাকে। অর্থাৎ ২২ ডিসেম্বরের দেড়মাস আগে ও দেড়মাস পরে অর্থাৎ মোট ৩ মাস দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল এবং উত্তর গোলার্ধে শীতকাল হয়ে থাকে।
⚫ উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে শরৎকালঃ
২১ শে মার্চ তারিখে সূর্য নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। ফলে দুই মেরু সূর্য থেকে সমদূরবর্তী হয়ে থাকে। তাই ২১ শে মার্চের দেড়মাস পূর্ব থেকে দেড়মাস পর পর্যন্ত উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে শরৎকাল হয়ে থাকে।

২১ জুন সূর্য সুমেরুবৃত্তে কত কোনে কিরন দেয়?
ReplyDeleteসুমেরুবৃত্তঃ৬৬.৩৩′ উত্তর অক্ষাংশ কে বলা হয় সুমেরু বৃত্ত।
Deleteঅপর দিখে ২৩.৫° উত্তর অক্ষাংশ রেখা কে কর্কট ক্রান্তি রেখা বলে।
২১ জুন কর্কট ক্রান্তি রেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। সূর্যের অবস্থান এবং সুমেরুবৃত্ত কেন্দ্রে যে কোন উৎপন্ন করবে সেই কোণে কিরণ দেয়। অর্থাৎ অক্ষাংশদ্বয় বিয়োগ করলে আপনি মান পেয়ে যাবেন।