💀ভুতের বাড়ি💀 ( love story)



                      💀ভুতের বাড়ি 💀
             
                  লেখকঃ ইন্দ্রনীল রায়
 
আমার সাতক্ষীরা পলিটেকনিক কলেজে পড়ার সুযোগ হয়েছে।জীবনে প্রথম বাইরে যাচ্ছি। তাই যেমন আনন্দ হচ্ছে তেমন ভয়ও করছে।জানিনি বাইরের জগৎ কেমন হয়?????
তবে এখানে আমি বেশ ছিলাম।অনেক বন্ধুও হয়ে ছিল অল্প দিনে।আমি মেসে থাকতাম।আর যদি এমন না হতো হয়তো আমি মেস ছাড়তাম না!!!!!!!
আমরা এক রুমে চার জন থাকতাম।আমি,রাসেল,পিকু, আলি।বেশ সময় কেটে যেতো লুডু খেলে।অনেক রাত জাগতাম।একদিন সোহেল ভাই আমাদের নিষেধ করলো এতো রাত জাগতে।কারণ জানতে চাইলে সে জানায় পাশের বাড়ীর কথা।আমাদের দালান আর তাদের দালান পাশাপাশি।১' ফাকা মাত্র।তাদের দালানে নাকি ভুত দেখা যায়।অবাক হয়ে বললাম আবার ভুত।সেই ভুত রাতে তাদের ছাদ আর আমাদের ছাদ ঘুরে বেড়ায়।আনেক জোরে ইট ছুড়ে শব্দ করে।আর কাদে।আর কেউ বেশি রাত জাগুক সেটা নাকি তার পছন্দ না।এই রুমে আগে যারা থাকতো তারা নাকি বেশি রাত জাগতো বলে তাদের জানালা একটা ভেঙ্গে দিয়েছিল।যেটা দিয়ে এই রুম থেকে ওই ছাদে আর ওই ছাদ থেকে এই রুমে আসা যায়।আমি জানালার দিকে তাকিয়ে একটু বয় পেলাম।রাতে আমাদের রুমে চলে না আসে।।।।।
ভুতের উতপাত খুব বেড়েছিল একসময়। সেদিন রাত ১২.৩০ বাজে।আমি বাদে সবাই ঘুমে।আমার ঘুম আসছিলনা পুরোনো স্মৃতি ভেবে।হঠাৎ রাসেল খাট থেকে পড়ে গেল।আর দিশেহারা হয়ে কেমন করতে লাগলো।আমি লাইট জ্বালালাম।আমি ওটা দেখে ভয় পেয়ে গেলাম।তাকে নাকি কেউ লাথি মেরে ফেলেছে।
পরে অন্য একদিন নাকি সবাই তার কান্না শুনলো।আমি তখন ঘুমে।সেদিন নাকি কেউ কেউ তাকে দেখেছিল।সে একটা মেয়ে ভুত।সাদা জামা প্যান্ট পরা।
সকালে উঠে দেখি আরাফাত ভাইরা তিন জনের খাট একসাথে।সেখানে কি হয়েছে আমি বুঝে গেছি।বললাম একবার ভুতটা দেখা দরকার।
.
তেমন কেউ গুরুত্ব দেয়নি আমার কথায়।সবাই ভয় পাচ্ছিল।শেষে আমি ঠিক করলাম একাই যাবো।
আর এখন আমি যে কথা গুলো বললবো সে কথাগুলো কেউ জানেনা।কাউকে বলিনি কখনো।আমাবস্যার দুই দিন আগে।
সকলে যখন ঘুমিয়ে পড়েছে তখন আমি উঠে পড়ি।জানালা দিয়ে ওই ছাদে যাই।প্রথমে ছাদের পুবের দিক। এরপর পশ্চিম দিক যেতেই ভয়ে চিৎকার করে উঠলাম।সেও চিৎকার করে ওঠে।মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিলাম।
এটা ভুত নয় একটা মেয়ে।আমি তাকে চিনি।কারন সে আমাদের মেসের পাশেই থাকে।আর সে আমাদের সাথে পড়ে যদিও ফাস্ট শিফটে।তার সত্যি নামটা বললবো না।আমরা গল্পের প্রয়োজনে তাকে লিপ্লা বলে ডাকতে পারি।তার সাথে এটাই আমার প্রথম কথা ছিল।
-তুমি এতো রাতে???
-ও হ্যালো,এটা আমাদের ছাদ।আমি থাকবো না তো কে থাকবে??? আর তুমি আমাদের ছাদে কেন???
-কিছু প্রশ্নের উত্তর খুজতে
-কি প্রশ্ন??
-এখানে প্রতি রাতে আসো???
-মাঝে মাঝে
-এই সাদা পোশাকে!!!!
-হ্যা!! কিন্তু কেন???
-তার মানে তুমিই সবাইকে ভয় দেখাচ্ছো???
-না সেটা আমি নই।আমিও তাকেই খুজতে আসি।
-তবে সে কে? কেন সে এমন করে????
-এখন না কাল সকালে দ্রুতো কলেজ যেয়ো তখন বললবো।এখন বলাটা নিরাপদ না।

.
আজ যে গল্পটা বলবো সেটা গল্প নয় কারোর জীবনী। হয়তো নাম স্থান ভিন্ন।আর হয়তো এটা কোনো ভৌতিক গল্প নয়।একজোড়া বাবুই পাখির বাসা বানাতে চাওয়ার গল্প।
এই যে শুনছেন।এমন মিষ্টি কন্ঠ হয়তো আগে কখনো শোনেনি আকাশ।পিছনে তাকিয়ে দেখে অসাধারন সুন্দরি একটি মেয়ে।দেখলেই মনে হয় চিরদিনের জন্য তার মনের গভির সমুদ্র হারিয়ে যাই।তার চোখ যেন মায়ার ইন্দ্রজাল।তাকালে মনে হয় কেউ যেন পিছন থেকে তীর মেরে আমাকে রক্তাক্ত করে দিল।
তবুও আকাশ ভাব নিয়ে বলল -জ্বি বলেন
-আমি আপনাকে ভালবাসি
স্পষ্ট কথা।কোনো জড়তা নেই।আকাশ হতবাক হয়ে কি যেন ভেবে মুচকি হেসে চলে গেলো।
পরের দিন কলেজ গেটে আবার সে মেয়েটির সাথে দেখা।
মেয়েটি আবার সেই একই কথা বলল।আকাশ ভাবলো মেয়েটি হয়তো ভুল ভাবছে না হলে.......
-বললেন না তো???
-কি বলবো??
-আমাকে আপনার ভাললাগে না!!!
-মানে কি তুমি আমাকে জনো??
-হ্যা।আপনি আমার এক বছরের জুনিয়র। আর আপনি হিন্দু এইতো.....
-জানার পরও এমন করছেন কেনো????
-কারন আমি যে আপনাকে ভালবাসি!!
-পাগলামি কইরেন না।আমরা সমাজে বাস করি।তাই আমরা কোনো সমাজ বিরুদ্ধ কাজ করতে পারিনা।
আকাশ চলে গেলো।সেদিন খুব কেদেছিল মেয়েটা।তারপর বাস স্টান্ড, চায়ের দোকান,এমন কি বিড়ির আড্ডাতেও মেয়েটি আকাশকে একই কথা বলে চলেছে।
হঠাৎ একদিন আকাশ আবিষ্কার করলো মেয়েটি তার পিছনে নেই।সে সারা কলেজ ঘুরলো কিন্তু তাকে পেলোনা।যে মেয়েটা এতোদিন তার ছায়া সঙ্গী ছিলো হঠাৎ সে কোথায় গেলো???
তার এক বান্ধবীকে জীঙ্গাসা করলে সে বলে -ওকে তো ছাদে যেতে দেখলাম
-কত আগে!!!!
-এই তো অল্প সময় আগে
আকাশ দৌড় দিলো। মেয়েটা যা পাগল না জানি কি করে!!!!!!
আকাশ ছাদে দেখে কেউ নেই।শুধু মেয়েটার সে গোলাপি ফুল আকানো ওড়নাটা পড়ে আছে।আাকাশ ধিরে ধিরে সেখানে গেলো। তারপর ওড়নাটা বুকে জড়িয়ে হাউ মাউ করে কাদতে লাগলো
-একবার একবার আমার মনের কথাটা শুনলে না।চ_চলে গেলে।আমাকে একবার বলার সুযোগ দিলেনা। আমি কি করবো এখন বল।আ_আমি_আমি ও যে তোমায়.........
.
.
ভালবাসি। কানের কাছে মিষ্টি ছোয়া পেলো আকাশ।ফিরতেই দেখে মেয়েটি।আকাশ সাথে সাথে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো।শক্ত খুব শক্ত করে।
-এমন পাগলামি কেউ করে???
-কি করবো আমি তো পাগল।তোমার প্রেমে পাগল।
আকাশ মুচকি হাসলো।মেয়েটা আকাশের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।তারপর আকাশের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল -এবার বলো ভালবাসো আমায়
আকাশ জলভরা চোখে মুচকি হেসে বলল -হু।খুব
তারপর শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল -পাগলি আমার......
.
.
- মেয়েটা কে ছিল???
-মেঘলা।
-তোমার দিদি???
-কিন্তু তুমি জানলেন কি করে এটা তো তেমন কেউ জানে না!!!!
-সে পরে হবে। তারপর বল কি হল???
-ওদের দিন গুলো ভালোই কাটছিল। ভালবাসার সাত রঙে রঙিন সে দিন।ভালবাসার মানুষটার কোলে মাথা রেখে এভাবেই ওদের দিন গুলো কেটে যেতো যদি সেদিন বাবা না থাকতো।
ওরা পাশাপাশি বসে গল্প করছিল হঠাৎ মেঘলার বাবা সেটা দেখে ফেলে।আর কিছু না বলেই চলে আসে।সেদিন রাতে সে মেঘলাকে একটা ছবি দেয়।
-কার ছবি বাবা
-শুক্রবার তোমার বিয়ে।এর সাথে
-মানে আমার বিয়ে আর আমি জানিনা
-এই তো বললাম
-বাবা আমি এই বিয়ে করতে পারবোনা
-কেন???
-আমি একজনকে ভালবাসি
-ওই রাস্তার ছেলেটা
-বাবা ও অনেক ভালো
-সে তোমার থেকে জুনিয়র
-তাই কি কোনো ছেলেকি সিনিয়র মেয়ে বিয়ে করেনা!!! সচিন,অভিশেখ বাচ্চন এরা,,,
-সে ওদের মতোনা।আর সে অন্য ধর্মের ছেলে
-সেটা তোমার সমস্যা বাবা।আমার না
-শোন শুক্রবার তোমার বিয়ে এরা ফাইনাল তোমার যোগাযোগের সব পথই বন্ধ ok
সেদিন সারা রাত সে কেদেছিলো।পরের দিন সে আমাকে দিয়ে খবর পাঠায়।কথা ছিল বিয়ের দিন ওরা পালাবে।কিন্তু আকাশ যাইনি।মেঘলা রাগে দুঃখে আত্মহত্যা করে।
সেই থেকে ছাদে এমনই হয়।
-কিন্তু মেঘলা এখন কেনো আকাশকে খুজে নিচ্ছেন।এখন তো সে বন্ধি না
-সে তো জানিনা
-ওর সাথে কথা বলার কোনো উপায় আছে
- # Black_tar_Angel
-মানে
-তৃণা।শুনেছি সে সব আত্মার সাথে কথা বলতে পারে
-তা হলে চলো
-চল
,
,
নাম হিন এক দরগায় ঘুকলাম।সত্যি বলতে একটু ভয় করছিল।লিপ্লা দেখি আমাকে জাপটে ধরেছে।মুল ঘরে ঢুকলাম।তার সামনে বসলাম
-বল কি সমস্যা
আমি সব বললাম।
-সত্যি আজব অতৃপ্ত আত্মার তে সেই ছেলের কাছে চলে যাওয়ার কথা।কিন্তু যাচ্ছেনা কেন??
-সেটাই তো কথা
-শোন আমাকে দেখতে হবে।আমি কাল রাতে যাবো।দেখি কি সে অজানা রহস্য ......
.

রাত হয়ে গেছে।আমাদের সাথে আছে আমি, লিপ্লা, তৃণা।মনটা কেমন যেন করছে।রাত ১.০০ টা।আমরা ছাদে উঠলাম।চারিদিকে ঠান্ডা বাতাস বইছে।আমাদের মেসের সবাই গভির ঘুমে।আমরা তখন যোগ্য শুরু করলাম।তৃণা মন্ত্র পড়ছে।অল্প সময়ের মাঝে আমরা তার দেখা পেলাম।সাদা জামা কাপড় পরা, চুল গুলো উল্টো পাল্টা, চোখ দুটো সম্পুর্ন সাদা, মুখ ফেটে চৌচির।সে আমাদের সামনে এসে দাড়ালো।
-তোরা এখানে কি করছিস
তৃণা -তুই এখানে কি করছিস।চলে যা অন্য কোথাও
-না।তোরা চলে যা নইলে.....
লিপ্লা -দিদি তুমি চলে যাও।কেন আমাদের এভাবে ভয় দিচ্ছো
-ভয়!!! আমি কাউকে ভয় দিচ্ছিনা!!!!!
আমি -কিন্তু আপনার চলাফেরায় আমরা ভয় পাচ্ছি।আপনি চলে যাচ্ছেন না কেন।আপনি আকাশের কাছে চলে যান।আকাশ কই????
-কি করে যাবো বল আমি যে বন্ধি।মৃত্যুও আমাকে মুক্তি দেয় নাই
আমি -মানে সেটা কেমন???
-আমাকে বাবা এখানে বন্ধি করে রেখেছে।কোনো এক সাধকের মাধ্যমে।কি করে যাবো বল
আমি -ও আপনি যেতে চেষ্টা করেন তাই এরকম শব্দ হয়।ঠিক আছে ভালই হয়েছে কারন আপনি বের হয়ে গেলে আকাশকে আপনি বাচতে দেবেন না।তাই আপনার বন্ধি হয়ে থাকা উচিত
-আকাশ আর কত বার মরবে বল
-মানে আকাশ......কিন্তু কি করে
-সেদিন আকাশ আসেনি কারন ওরা আকাশকে........
-ওরা কারা???
-আমার বাবা
-কি!!!!! আকাশ এখন কোথায়
-ও তোদের দালানে থাকে।কাছে আসতে পারেনা।ভেবেছিলাম মৃত্যুর পর আমরা এক হতে পারবো কিন্তু মরণও আমাদের মিলন ঘটাতে পারলোনা।
-তৃণা আপু তুমি কি ওকে মুক্তি করতে পারো
-হ্যা
-তবে plz তাই করো।আর হ্যা মুক্তির পর তোমরা কি করবে
-আমরা চলে যাবো দুর দেশে চলে যাবো
লিপ্লা -দিদি তুমি কি বাবার উপর প্রতিশোধ নিবে???
-নারে
-কেন
-কারন তিনি আমার জন্মদাতা।আমার জন্ম তার জন্য তাই তার প্রতি আমার কোনো রাগ নেই
তৃণা মেঘলাকে মুক্ত করে দিলো।ওরা দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলো।হারিয়ে গেলো দূর অজানায়।তখন আমার যেনো কোনো একজনের কথা খুব মনে পড়ছিল।থাক সে কথা অন্য কোনো দিন বলব৷৷ 
Arup

hi, I am ARUP SARDAR. I am a student at university of Barishal. My Department is Geology and Mining.

Post a Comment

Previous Post Next Post