⚫পৃথিবীর কাল্পনিক রেখা সমূহঃ
প্রকৃত পক্ষে আমাদের এই পৃথিবীর উপর কোনো রেখা নেই। কিন্তু আমাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে পৃথিবীর উপর কিছু রেখা কল্পনা করে থাকি। যেমনঃ বিভিন্ন দেশের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য। এই কাল্পনিক রেখাসমূহ হচ্ছে বিষুবরেখা( নিরক্ষরেখা), অক্ষরেখা, সমাক্ষরেখা, দ্রাঘিমা রেখা, মূল মধ্যরেখা আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা ইত্যাদি।
♦️ বিষুবরেখা বা নিরক্ষরেখাঃ
আমাদের এই পৃথিবীর দুই মেরু ( উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু) থেকে সমান দূরত্বে পৃথিবীকে পূর্ব - পশ্চিমে বেষ্টন করে যে রেখা কল্পনা করা তাকে বিষুবরেখা বা নিরক্ষরেখা বলা হয়। এই বিষুবরেখা বৃত্তাকার তাই এই রেখা কে নিরক্ষবৃত্ত ও বলা হয়। এই রেখা মহাবৃত্ত, গুরুবৃত্ত ইত্যাদি নামে পরিচিত। এই রেখা পৃথিবীকে উত্তর ও দক্ষিণ সমান দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। এই বিষুব রেখার উত্তর দিকের পৃথিবীর অর্ধেক কে উত্তর গোলার্ধ এবং দক্ষিণ দিকের পৃথিবীর অর্ধেক কে দক্ষিণ গোলার্ধ বলা হয়। ইকুয়েডর, কলম্বিয়া, ব্রাজিল, কেনিয়া, সোমালিয়া, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, গ্যাবন, উগান্ডা এবং কিরিবাতি দেশ গুলো বিষুব রেখার উপর অবস্থিত।
♦️ অক্ষাংশঃ
বিষুবরেখা হতে উত্তরে বা দক্ষিণে অবস্থিত কোনো স্থানের কৌণিক দূরত্ব কে ঐ স্থানের অক্ষাংশ বলা হয়। নিরক্ষরেখার উত্তর দিকে অবস্থিত কোনো স্থানের অক্ষাংশ কে উত্তর অক্ষাংশ বলে। দক্ষিণ দিকে অবস্থিত কোনো স্থানের অক্ষাংশ কে দক্ষিণ অক্ষাংশ বলে। নিরক্ষরেখার সাহায্যে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের কোনো স্থানের কৌণিক দূরত্ব পরিমাপ করা যায়। জ্যামিতিক কোণের ন্যায় অক্ষাংশের পরিমাপের একক কে ° ( ডিগ্রি) বলা হয়।নিরক্ষরেখার অক্ষাংশ ০°, উত্তর মেরু বা সুমেরুর অক্ষাংশ ৯০° উত্তর। দক্ষিণ মেরু বা কুমেরুর অক্ষাংশ ৯০° দক্ষিণ। একই অক্ষরেখায় অবস্থিত সকল স্থানের অক্ষাংশ একই হয়ে থাকে। এই অক্ষাংশের পরিমাপের ক্ষেত্রে ০° হতে ৩০° পর্যন্ত অক্ষাংশকে নিম্নঅক্ষাংশ, ৩০° থেকে ৬০° পর্যন্ত অক্ষাংশকে মধ্যে অক্ষাংশ এবং ৬০° থেকে ৯০° পর্যন্ত অক্ষাংশ কে উচ্চ অক্ষাংশ বলে।
♦️ অক্ষাংশ নির্ণয়ের পদ্ধতিঃঃ
অক্ষাংশ নির্ণয় করতে সাধারণত দুই টি পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। সূর্যের উন্নতি কোণ ও ধ্রুব তারার উন্নতি কোণের মাধ্যমে পরিমাপ করা যায়।
১. সেক্সট্যান্ট যন্ত্রের সাহায্যেঃ
যে যন্ত্র ব্যবহার করে সূর্যের উন্নতি কোণ পরিমাপ করা যায় তাকে সেক্সট্যান্ট যন্ত্র বলে। সেক্সট্যান্ট যন্ত্র ব্যবহার করে সূর্যের উন্নতি কোণ নির্ণয় করে অক্ষাংশ নির্ণয় করা যায়।
২. ধ্রুব তারা সাহায্যেঃ
ধ্রুব তারার উন্নতি কোণের সাহায্যে উত্তর গোলার্ধের যে কোনো স্থানের অক্ষাংশ নির্ণয় করা যায়। নিরক্ষরেখায় ধ্রুব তারার উন্নতি কোণ ০°। উত্তর মেরুর উন্নতি কোণ ৯০° হয়।
♦️ সমাক্ষরেখাঃ
নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু উভয় মেরুর কৌণিক দূরত্ব ৯০°। এই কোণকে ডিগ্রী, মিনিটে ভাগ করে নিরক্ষরেখার সমান্তরাল যে রেখা কল্পনা করা হয় তাকে সমাক্ষ রেখা বলে।
⚫ সমাক্ষরেখার বৈশিষ্ট্যঃঃ
১. প্রত্যেকে একটি পূর্ণবৃত্ত।
২. পূর্ব পশ্চিম বিস্তৃত।
৩. প্রত্যেকে পরস্পরের সমান্তরাল।
৪. পরস্পর সমান নয়।
৫. সর্বোচ্চ অক্ষাংশ ৯০°।
⚫ বিখ্যাত সমাক্ষরেখা সমূহঃঃ
১. কর্কটক্রান্তি রেখাঃ ২৩.৫° উত্তর অক্ষাংশ রেখা কে কর্কট ক্রান্তি রেখা বলে।
২. মকরক্রান্তি রেখাঃ ২৩.৫° দক্ষিণ অক্ষাংশ রেখাকে মকরক্রান্তি রেখা বলে।
৩. সুমেরুবৃত্তঃ৬৬.৩৩′ উত্তর অক্ষাংশ কে বলা হয় সুমেরু বৃত্ত।
৪. কুমেরুবৃত্তঃ ৬৬.৩৩' দক্ষিণ অক্ষাংশকে বলা হয় কুমেরুবৃত্ত।
♦️ দ্রাঘিমা রেখাঃ নিরক্ষরেখা কে ডিগ্রী, মিনিট ও সেকেন্ডে ভাগ করে প্রত্যেক ভাগ বিন্দুর উপর দিয়ে উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত যে রেখা গুলো কল্পনা করা হয়েছে সেই রেখা গুলো কে দ্রাঘিমা রেখা বলে।
⚫ দ্রাঘিমা রেখার বৈশিষ্ট্যঃ
১. দ্রাঘিমা রেখা গুলো অর্ধবৃত্ত।
২. উত্তর-দক্ষিণ বিস্তৃত।
৩.প্রত্যেক দ্রাঘিমা রেখার দৈর্ঘ্য সমান।
৪. পরস্পর সমান্তরাল নয়।
৫. সর্বোচ্চ দ্রাঘিমা ১৮০°।
♦️মূল মধ্যরেখাঃ
যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত গ্রিনিচ মান মন্দিরের উপর দিয়ে উত্তর মেরু হতে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত যে মধ্যরেখা অতিক্রম করেছে তাকে মূল মধ্যরেখা বলে। এই মূল মধ্যরেখার মান ০ ডিগ্রী ধরা হয়েছে।
গ্রিনিচের মূল মধ্যরেখা থেকে পূর্ব বা পশ্চিমে যে কোন স্থানের কৌণিক দূরত্বকে সেই স্থানের দ্রাঘিমা বলা হয়।
## গিনি উপসাগরের একটি স্থানে নিরক্ষরেখা ও মূল মধ্যরেখা পরস্পর কে লম্বভাবে ছেদ করেছে। এই স্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা উভয়ই ০°।
♦️ প্রতিপাদ স্থান ( antipode):
পৃথিবী পৃষ্ঠের উপর অবস্থিত কোনো বিন্দুর বিপরীত বিন্দুকে সেই বিন্দুর প্রতিপাদ স্থান বলে। প্রতিপাদ স্থান সম্পুর্ন ভাবে একে অপরের বিপরীত দিকে থাকে। যেমন একটি স্থানের অক্ষাংশ ৬০ডিগ্রী উত্তর হলে তার প্রতিপাদ স্থানের অক্ষাংশ হবে ৬০ ডিগ্রী দক্ষিণ। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার প্রতিপাদ স্থান দক্ষিণ আমেরিকার অন্তর্গত চিলির নিকট প্রশান্ত মহাসাগরে। প্রতিপাদ স্থান দুইটির মধ্যে সময়ের ব্যবধান ১২ ঘন্টা।
১৮০ ডিগ্রী দ্রাঘিমা রেখাকে অবলম্বন করে সম্পুর্ন জলভাগের উপর দিয়ে উত্তর- দক্ষিণ প্রসারিত যে রেখা কল্পনা করা হয় তাকে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা বলে। এই রেখাটি ১৮০° দ্রাঘিমা রেখা হলেও কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত। এই রেখাটি আঁকাবাকা। এই রেখাটি প্রশান্ত মহাসাগরের জলভাগের উপর অবস্থিত।।
Nice content
ReplyDelete