বাংলাদেশ ভৌগোলিক অবস্থান, সীমানা এবং বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি

♦️ বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও সীমানাঃ

🔻অবস্থানঃ 

বাংলাদেশ এশিয়া ( পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশ) মহাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত।  বাংলাদেশ ২০°৩৪' উত্তর অক্ষরেখা থেকে ২৬°৩৮' উত্তর অক্ষরেখার মধ্যে এবং ৮৮°০১' ০পূর্ব দ্রাঘিমা রেখা থেকে ৯২°৪১' পূর্ব দ্রাঘিমা রেখার মধ্যে অবস্থিত।  বাংলাদেশের মাঝখান দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা ( ২৩°৫' উত্তর অক্ষরেখা)  অতিক্রম করেছে। 

বাংলাদেশের উত্তরে অবস্থিত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ,  মেঘালয় ও আসাম। পূর্বে আসাম,  ত্রিপুরা,ও মিজোরাম এবং মিয়ানমার ( বার্মা)। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর  এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। 

🔻 আয়তনঃ বাংলাদেশের আয়তন ৫৬,৯৭৭বর্গমাইল বা ১,৪৭,৫৭০বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৯০ তম।

♦️ বাংলাদেশের প্রান্তীক স্থান সমূহঃ

🔻উত্তরঃ বাংলাবান্ধা / জায়গীরজোত;  উপজেলাঃ তেতুলিয়া ; জেলাঃ পঞ্চগড়। 

🔻 দক্ষিণঃ ছেঁড়াদ্বীপ / মেন্ট মার্টিন ; উপজেলাঃ টেকনাফ ; জেলাঃ কক্সবাজার। 

🔻পূর্বঃ আখানইঠং ; উপজেলাঃ থানচি ; জেলা: বান্দরবান। 

🔻 পশ্চিমঃ মনাকশা ; উপজেলাঃ শিবগঞ্জ ; জেলাঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জ। 



♦️বাংলাদেশের কৌণিক শীর্ষ স্থান সমূহঃ

🔻 উত্তর- পশ্চিম কোণঃ তেতুলিয়া,  পঞ্চগড়।

🔻 উত্তর- পূর্ব কোণঃ জকিগঞ্জ, সিলেট। 

🔻 দক্ষিণ- পশ্চিম কোণঃ শ্যামনগর,  সাতক্ষীরা। 

🔻 দক্ষিণ - পূর্ব কোণঃ টেকনাফ,  কক্সবাজার। 


♦️বাংলাদেশের সীমা রেখাঃ 

বাংলাদেশের সাথে ভারত ও মিয়ানমার এবং বঙ্গোপসাগরের সাথে সীমানা আছে।

▪️ বাংলাদেশের সর্বমোট সীমারেখা  ৫১৩৮ কিলোমিটার। 

▪️ বাংলাদেশের মোট স্থাল ভাগের সীমারেখা ৪৪২৭ কিলোমিটার। 

▪️ বাংলাদেশ - ভারত সীমারেখার দৈর্ঘ্য ৪১৫৬ কিলোমিটার। 

▪️ বাংলাদেশ - মিয়ানমার সীমারেখার দৈর্ঘ্য ২৭১ কিলোমিটার। 

▪️বাংলাদেশের উপকূলের দৈর্ঘ্য ৭১১ কিলোমিটার।   { সূত্রঃ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ}

▪️বাংলাদেশের সীমানার সাথে ভারতের ৫ টি রাজ্য রয়েছে।  যথাঃ আসাম, মিজোরাম,  ত্রিপুরা,  মেঘালয়, ও পশ্চিমবঙ্গ।

▪️ বাংলাদেশের সীমানার সাথে মিয়ানমারের ২টি প্রদেশ রয়েছে।  যথাঃ চিন ও রাখাইন। 

▪️ বাংলাদেশের   মোট সীমান্তবর্তী জেলা ৩২ টি।



▪️ ভারতের  সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের জেলা ৩০টি।

▪️ মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের জেলা ৩টি ( যথাঃ কক্সবাজার, বান্দরবান,  রাঙ্গামাটি।

▪️ ভারত ও মিয়ানমার উভয় দেশের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের জেলা ১টি যথাঃ রাঙ্গামাটি।

▪️ঢাকা বিভাগ ও বরিশাল বিভাগের সাথে ভারতের কোনো সীমান্ত রেখা নেই।

♦️♦️ বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চলের শ্রেণি বিভাগ ও গঠন। 


বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল নদীর পলল দ্বারা গঠিত সমভূমি।  তবে বাংলাদেশে সামান্য পরিমাণ উঁচু ভূমি রয়েছে। ভূ-প্রকৃতি অনুসারে বাংলাদেশ কে ৩টি শ্রেণি তে বিভক্ত করা হয়েছে। যথাঃ 

ক.টারশিয়ারি যুগের পাহাড় সমূহ। 

খ. প্লাইস্টোসিন কালের সোপান সমূহ। 

গ.সাম্প্রতিক কালের প্লাবন সমভূমি। 

🔻 টারশিয়ারি যুগের পাহাড় সমূহঃঃ

বাংলাদেশের মোট ভূখণ্ডের প্রায় ১২% এলাকা নিয়ে টারশিয়ারি যুগের পাহাড় সমূহ গঠিত। টারশিয়ারি যুগে হিমালয় পর্বত উথিত হওয়ার সময়কালে এই পাহাড় গুলো সৃষ্টি হয়েছিল। বাংলাদেশের ৩টি ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চল সমূহের মধ্যে প্রাচীনতম। টারশিয়ারি যুগে গঠিত পাহাড় সমূহ ভাঁজ বা ভংগিল পর্বত শ্রেনীর।  টারশিয়ারি যুগের পাহাড় সমূহ কে ২টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ ক.দক্ষিন পূর্বাঞ্চলের পাহাড় সমূহ খ. উত্তর ও উত্তর - পূর্বাঞ্চলের পাহাড় সমূহ। 

🔻ক.দক্ষিণ - পূর্বাঞ্চলের পাহাড় সমূহঃ

রাঙ্গামাটি,  বান্দরবান, খাগড়াছড়ি,  ককক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে অবস্থিত।  এই অঞ্চলের পাহাড় সমূহ সাধারণত শেলপাথর,  বেলে পাথর ও কর্দমের দ্বারা গঠিত।  এই পাহাড় সমূহ মিয়ানমারের আরাকান এবং আসামের লুসাই পাহাড়ের সমগোত্রীয়।  এই অঞ্চলের পাহাড় গুলোর গড় উচ্চতা ৬১০ মিটার।

# বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম তাজিং ডং বা বিজয়।  অবস্থানঃ রুমা, বান্দরবান।  উচ্চতা ১২৩১ মিটার ( সূত্রঃবাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়)  / ৪৫০০ ফুট ( সূত্রঃ জেলা তথ্য বাতায়ন)

# বাংলাদেশের দ্বিতীয়  সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হচ্ছে কেওক্রাডং।  অবস্থানঃ রুমা,বান্দরবান।  উচ্চতাঃ ১২৩০মিটার ( সূত্র বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়) / ৪৩৩০ ফুট ( সূত্র জেলা তথ্য বাতায়ন) 


🔻খ. উত্তর ও উত্তর - পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড় সমূহঃ

ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা,  সিলেট,  মৌলভীবাজার,  হবিগঞ্জ অঞ্চলে অবস্থিত। পাহাড় গুলোর উচ্চতা ২৪৪ মিটারের বেশি নয়। পাহাড় গুলো স্থায়ী ভাবে টিলা নামে পরিচিত। এই অঞ্চলের পাহাড় গুলোর মধ্যে চিকনাগুল, খাসিয়া,  জয়ন্তিয়া ইত্যাদি। 


🔻প্লাইস্টোসিন কালের সোপান সমূহঃ

আনুমানিক ২৫০০ বছর পূর্বে প্লাইস্টোসিন কালে আন্তঃবরফ গলা পানিতে প্লাবনের সৃষ্টির মাধ্যমে চত্বর ভূমি গঠিত হয়েছিল বলে ধারণা করা যায়।  বাংলাদেশের মোট ভূখণ্ডের ৮% এলাকা নিয়ে এই অঞ্চল গঠিত।  প্লাইস্টোসিন কালের এই চত্বরভূমি বা সোপান সমূহকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়।

ক. বরেন্দ্রভূমিঃ রাজশাহীর উত্তরাংশ, বগুড়ার পশ্চিমাংশ ও দিনাজপুরের কিছু অংশ নিয়ে বরেন্দ্রভূমি গঠিত। আয়তন প্রায় ৯৩২০ বর্গকিলোমিটার। 

খ. মধুপুর ও ভাওয়ালগড়ঃ টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলার মধুপুর এবং গাজীপুর জেলায় ভাওয়ালগড় অবস্থিত।

গ. লালমাই পাহাড়: লালমাই পাহাড় কুমিল্লা জেলায় অবস্থিত। পাহাড়টির গড় উচ্চতা ২১ মিটার।


🔻 সাম্প্রতিক কালের প্লাবন সমভূমিঃঃ

বাংলাদেশের মোট ভূখণ্ডের প্রায় ৮০ ভাগ ভূমি নদীবিধৌত এক বিস্তৃীর্ণ সমভূমি। এই প্লাবন সমভূমির আয়োতন প্রায় ১,২৪,২৬৬ বর্গকিলোমিটার।  এ সমভূমি উত্তর অংশ থেকে উপকূলের দিকে ক্রম নিম্ন। সুন্দরবন অঞ্চল প্রায় সমুদ্র সমতলে অবস্থিত।  সমুদ্র সমতল থেকে বাকি অঞ্চল গুলো যেমন বগুড়ার উচ্চতা  ২০ মিটার, ময়মনসিংহের উচ্চতা ১৮ মিটার এবং নারায়ণগঞ্জ ও যশোরের উচ্চতা ৮ মিটার।



Arup

hi, I am ARUP SARDAR. I am a student at university of Barishal. My Department is Geology and Mining.

1 Comments

Previous Post Next Post