ইতি তোমার মেয়ে ( মাকে নিয়ে একটা ছোট গল্প)

     


       

                  ইতি তোমার মেয়ে

ইন্দ্রনীল রায় সূর্য

সমাপ্তি,এই শহরের সব থেকে ভাল ডাক্তারদের মধ্যে একজন সে।বিবাহিত,সফল একজন   ডাক্তার।তার এই সফলতার প্রশংসা অনেকেই করে।তবে তার জীবনের করুন একটা গল্প এই শহরের কাছে অজানা।আজও প্রতি রাতে সে কথাগুলো তার মনে পড়ে।তার মায়ের কথা।তার জন্য তার মায়ের কষ্ট,ত্যাগের কথা।আজও প্রতি রাতে একটা বাচ্চার মত সে তার মাকে চিঠি লেখে আর একটা গ্যাস বেলুনে বেধে এই আশায় ছেড়ে দেয় যে তার মা হয়তো কোনো দিন সেটা দেখবে।

"মা,তোমার কথা সব সময় মনে পড়ে।জীবনের একটাই উদ্দ্যেশ্য এখন আমার জানো।আমার মেয়েকে তেমন ভাবে গড়ে তুলবো যেভাবে তুমি তুলতে"

ইতি তোমার মেয়ে

.

.

-সমাপ্তি..সমাপ্তি....

ওঠ সকাল ৬টা বাজে।৭টায় তোর শিমুল স্যারের প্রাইভেট না।

-মা একটু ঘুমাই।

-একটুও না।আমি ভাত দিচ্ছি।খেতে আয় ৫ মিনিটের মধ্যে।

মায়ের কড়া শাসন,সব সময় মাকে ভয় পায় ওরা দুই ভাই বোন।মুখ কালো করে হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসে সে।

-আজ আবার ডাল।প্রতিদিন সকালে ডাল খেতে ভাল লাগে না।

-এই ছাড়া আর কি দিবো বল।তোর বাবার এই ছোট একটা চাকরি,সেখানে তোর ৭টা প্রাইভেট,তোর ভাইয়ের দুইটা,বই খাতা,দুবছর ধরে ঘরের টিনের চাল ঠিক করার টাকা নেই।

মুখ কালো করে বসে থাকে সে

-আচ্ছা ঠিক আছে কাল সাথে একটা ডিম ভেজে দিবো

সমাপ্তি খেয়ে স্কুলে চলে যায়।একের পর একটা প্রাইভেট,স্কুল,আবার প্রাইভেট।সন্ধ্যায় বাসায় ফেরে সে।হয়তো এই কারনে তার কখনো তার মায়ের কষ্টটা চোখে আসে নাই।

তার মা ভোরে উঠে রান্না করতো,ছেলে মেয়েকে স্কুলে পাঠাতো।নিজে বেশি পড়াশুনার সুযোগ পায়নি এই জন্য চাইতো তার মেয়ে ডাক্তার হবে।কিন্তু সে এটা জানতো এতে যে খরচ হবে তা আর স্বামী একা দিতে পারবে না।আর এই গ্রামে উপার্যনের উৎস নেই বললেই চলে।তবুও সে সারা দিন কাথা সেলাই করতো,অল্প দর্জির কাজটা জানতো,সন্ধ্যায় ছোট বাচ্চাদের পড়াতো।দিনের এমন কোনো সময় ছিলো না যখন সে বসে একটু কারো সাথে গল্প করতে পারে।তবুও তাকে কখনো ক্লান্ত দেখাতো না।কারন এতো কিছুর মাঝে সে তার মেয়ের ভবিষ্যৎ ঠিক দেখতে পেতো।

এবাবেই দিন কাটতে থাকলো।সমাপ্তি ইন্টার শেষ করে ফেললো।আর অনেক ভালো নাম্বার ও পেলো।এবার তার মেডিকেল ভর্তির সময়।সেই সময় যার জন্য সে এতো কষ্ট করছে।সমাপ্তিকে ভর্তি পরিক্ষার পড়াশুনার জন্য বাইরে যেতে হলো।

সেখানে তার পড়াশুনা অনেক ভালো চলছিলো।তবে কিছু দিনের মধ্যেই সেখানে তার একটা ছেলের সাথে পরিচয় হয়।আকাশ।

সেও মেডিকেল ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে।তারা দিনে দিনে আরও কাছে চলে আসে।প্রতিদিন দেখা করা,বাইরে ঘুরতে যাওয়া।প্রথম প্রেমের অনুভূতি গুলোই অন্য রকম হয়।বাসায় ফিরেও সে নিজে  নিজের সাথে কথা বলতে শুরু করে,আকাশকে নিয়ে ভাবতে তার ভালো লাগে।আয়নার সামনে দাড়ালে আয়নার সাথে কথা বলে।

-আচ্ছা তুমি মোবাইল ব্যাবহার করো না কেনো

-দেখো তুমি তো সব জানো মা রাজি হবে না।আর আমার পরিবারের সামর্থ্য তেমন না যে আমাকে ভালো মোবাইল কিনে দিবে

-তুমি বলবে পড়াশুনার জন্য দরকার।দেখবে ঠিক কিনে দিবে

সমাপ্তি তার মাকে বলে।পড়াশুনার জন্য দরকার শুনে সে মানুষের কাছ থেকে ধার করে একটা মোবাইল কিনে দেয় মেয়েকে।মোবাইল পেয়ে সমাপ্তি আরও সময় আকাশের সাথে কাটাতে পারে।রাত জেগে কথা বলা শুরু হয়।এদিকে মেয়ের খরচ বাড়তে থাকায় তার মা চিন্তায় পড়ে যায়।আবার তার ছেলে ৯ম শ্রেণীতে পড়ছে।তার খরচ দ্বিগুণ বেড়েছে।বাধ্য হয়ে সে তার একটা আত্মিয়কে বলে ছোট একটা চাকরি নেয়।অতি সামান্য বেতনে।কিন্তু কখনো সে তার কষ্টগুলো তার মেয়েকে বুঝতে দেয়নি।আর অন্যদিকে আকাশকে পেয়ে সমাপ্তি বাইরের সকল কিছু ভুলতে থাকে।তার দুনিয়া আকাশের আশে পাশে সিমাবদ্ধ হয়ে যায়।এরই মাধে পরিক্ষা এসে যায়।সমাপ্তির প্রস্তুতি ভালো না হলেও  তার সেদিকে মন থাকে না।পরিক্ষায় আকাশ মেডিকেলে সুযোগ পেলেও সমাপ্তি পায়নি।

তার মায়ের স্বপ্নটা একেবারে ভেঙ্গে যায়।সে ভেবেই নিয়েছিলো এতো ভালো রেজাল্টের পর সে মেডিকেলে ভর্তি হয়ে যাবে।তাদের সকল জমানো টাকা সব শেষ হয়ে গেছিলো।কিন্তু সমাপ্তির সেদিকে এতোটা মন ছিলোনা।কারন সে আকাশের সাথে কথা বলতো দেখা করতো।এবাবেই যাচ্ছিলো।তবে সমস্যা তখনই বাড়ে যখন আকাশ মেডিকেলে গিয়ে সমাপ্তির থেকেও ভালো মেয়ে পেয়ে যায়।সে একটু একটু করে সমাপ্তির থেকে সরে যেতে থাকে।আর একটা সময়ের পর সে সমাপ্তির সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।তখনই সমাপ্তি নিজের অস্তিত্ব খুজে পায়।সে এতোদিন একটা মিথ্যে মায়ায় অন্ধ হয়ে ছিলো।সে তখনই তার মায়ের কষ্টগুলো বুঝতে পারে।সে তার পরিবারের দিকে তাকায়।কতটা কষ্টে দিন কাটাচ্ছে তারা।কিন্তু কখনো সে এই কষ্টটা দেখতেই পায়নি।

সে আবার মেডিকেলে ভর্তির জন্য পড়াশুনা শুরু করে।

তার মা মেয়ের এমন সিদ্ধান্তে খুশি হলেও তাদের অর্থনীতিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো।এইজন্য তার মা বেশি উপার্যনের জন্য আরো বেশি কষ্টের কাজ করতে থাকে।

পরিক্ষার দিন কাছে চলে আসে।কিন্তু এরই মাঝে তার মা অসুস্থ হয়ে যায়।আর অর্থের অভাব দেখা দিতে থাকে।

অবশেষে কোনো ভাবে সমাপ্তি পরিক্ষা দেয়।রেজাল্ট হাতে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় সে।সবার আগে মাকে জানানোর জন্য সে মাকে কল করে,কিন্তু.............................

.

"সরি মা,আমি কোনোদিন তোমাকে বুঝতে পারিনি।তুমি আমার জন্য নিরবে যা যা করে গেলো আমি সেটা দেখতেই পাইনি।আমি আমার রঙিন দুনিয়াই এতোটাই ভুলে ছিলাম যে,যে আমাকে আমার এই রঙিন দুনিয়ায় আসতে সাহায্য করেছে তার কথা মনেই ছিলো না।আমি তোমাকে বলতেই পারিনি মা যে আমি মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিলাম।আমি তোমার স্বপ্ন পুরোন করছি মা।আজ আমি একজন ডাক্তার।কিন্তু মা আমি তোমাকে এই কথাটা কোনোদিন জানাতেই পারলাম না। আমাকে ক্ষমা করে দিও

                       . ইতি তোমার মেয়ে"

Arup

hi, I am ARUP SARDAR. I am a student at university of Barishal. My Department is Geology and Mining.

Post a Comment

Previous Post Next Post