জোয়ার ভাটা হওয়ার কারণ



 সমুদ্র এবং সমুদ্রের উপকূলবর্তী নদীর জলরাশি প্রতিদিনই কিছু সময়ের জন্য  ধীরে ধীরে  ফুলে ওঠে ( অর্থাৎ উচ্চতা বৃদ্ধি পায়) আবার কিছু সময়ের জন্য ধীরে ধীরে নেমে যায় ( অর্থাৎ  উচ্চতা হ্রাস পায়) জলরাশির এরকম নিয়মিত  ফুলে ওঠাকে জোয়ার এবং নেমে যাওয়া কে ভাটা বলে ।


সমুদ্র এবং সমুদ্রের উপকূলবর্তী কোন একটা স্থানে প্রতিদিন দুইবার জোয়ার ও দুইবার ভাটা হয়।  সমুদ্রের  মধ্যভাগে জল সাধারণত এক থেকে তিন ফুট উঁচু- নিচু হয়। কিন্তু উপকূলের নিকট  সাগর, উপসাগরের গভীরতা কম বলে সেখানে জলরাশি  অনেক উঁচু -নিচু হয়। এজন্য সমুদ্রের মোহনা থেকে নদী সমূহের গতি পথে কয়েক কিলোমিটার  পর্যন্ত জোয়ার- ভাটা অনুভূত হয়।




🔵 জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির কারণঃ




বর্তমানে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রধানত দুইটি কারনে জোয়ার ভাটা সৃষ্টি হয়।


১.চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষ বলের প্রভাব


২. পৃথিবীর আবর্তনের ফলে উৎপন্ন কেন্দ্রাতিগ শক্তি 




১. চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষ বলের প্রভাবঃ


পৃথিবীর সকল পদার্থ  একে অপরকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণ কে মহাকর্ষ বলে। মহাকর্ষ এর সূত্র অনুযায়ী, মহাকাশে বিভিন্ন গ্রহ, উপগ্রহ ,নক্ষত্র প্রভৃতি পরস্পরকে আকর্ষণ করে। তাই সূর্য, চাঁদ ও পৃথিবীও পরস্পরকে  আকর্ষণ করে। যে সকল পদার্থ যত বড় সে সকল পদার্থের আকর্ষণ বলও তত বেশি।  কিন্তু দূরত্ব বৃদ্ধি পেলে আকর্ষণ বলের মান ও কমতে থাকে। পৃথিবীর উপর সূর্য অপেক্ষা চাঁদের আকর্ষণ বল বেশি হয়। কারণ সূর্য চাঁদ অপেক্ষা ২.৬০ কোটি গুন বড় হলেও পৃথিবী সূর্য থেকে গড়ে ১৫ কোটি কিলোমিটার  দূরে  অবস্থান করে। পৃথিবী থেকে চাঁদের গড় দূরত্ব মাত্র ৩৮.৪ লক্ষ  কিলোমিটার। এই জন্য পৃথিবীর উপর সূর্য অপেক্ষা চাঁদের আকর্ষণ বল বেশি।  সুতরাং জোয়ার ভাটার ব্যাপারে সূর্য  অপেক্ষা চাঁদের প্রভাব বেশি।হিসাব করে দেখা গিয়েছে যে, জোয়ার উৎপাদনে সূর্যের ক্ষমতা চাঁদের (4÷9) ভাগ। যখন সূর্য, চাঁদ ও পৃথিবী একই সরল রেখায় অবস্থান করে তখন চাঁদ ও সূর্যের উভয়ের আকর্ষনে জোয়ার অত্যন্ত প্রবল হয়।


2. পৃথিবী তার আবর্তনের ফলে উৎপন্ন কেন্দ্রাতিগ শক্তিঃঃ


 পৃথিবী তার নিজ অক্ষের চারিদিকে দ্রুত বেগে ঘুরছে বলে কেন্দ্রতিগ শক্তির সৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে জলরাশি ছিটকে যাওয়ার প্রবনতা সৃষ্টি হতে চায়। এমনি ভাবে কেন্দ্রাতিগ শক্তিও জোয়ার ভাটা সৃষ্টিতে সহায়তা করে ।।




জোয়ারের শ্রেনিবিভাগঃ




জোয়ার কে কয়েকটি শ্রেনিতে ভাগ করা যায়। যথাঃঃ


ক. মুখ্য জোয়ার 


খ. গৌণ জোয়ার 


গ.ভরা কটাল


ঘ. মরা কটাল



ক. মুখ্য জোয়ারঃ 


চাঁদ পৃথিবীর চারিদিকে আবর্তিত হচ্ছে।  চাঁদের এই আবর্তন কালে পৃথিবীর যে অংশে চাঁদের  নিকটবর্তী হয় সেখানে চাঁদের আকর্ষণ সর্বাপেক্ষা বেশি হয়।  এই আকর্ষণের ফলে চারিদিক হতে জল এসে চাঁদের দিকে ফুলে ওঠে এবং জোয়ার হয়। একে মুখ্য জোয়ার বা প্রত্যক্ষ জোয়ার বলে।




খ. গৌণ জোয়ারঃঃ


চাঁদ পৃথিবীর যে পার্শ্বে আকর্ষণ করে তার বিপরীত দিকের জলরাশির ওপর মহাকর্ষণ বলের প্রভাব কমে যায় এবং কেন্দ্রাতিগ শক্তির সৃষ্টি হয়। ফলে চারিদিক থেকে জল ঐ স্থানে এসে জোয়ারের সৃষ্টি করে।  অর্থাৎ চাঁদের বিপরীত দিকে যে জোয়ার হয় তাকে গৌণ জোয়ার বা পরোক্ষ জোয়ার বলে।


গ. ভরা কটালঃ


অমাবস্যা তিথিতে চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর একই পাশে এবং  পূর্নিমা তিথিতে পৃথিবীর এক পার্শ্বে চাঁদ এবং অপর পার্শ্বে সূর্য অবস্থান করে । পূর্নিমা অথবা অমাবস্যা  তিথিতে পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য প্রায়ই একই সরল রেখায় অবস্থান করে ।তাই সূর্যের আকর্ষণ শক্তি চাঁদের আকর্ষণ শক্তিকে সাহায্য  করে । উভয়ের মিলিত আকর্ষনে যে প্রবল জোয়ারের সৃষ্টি হয় তাকে তেজ কটাল বা ভরা কটাল বলে।


ঘ.মরা কটালঃ


সপ্তমী ও অষ্টমী তিথিতে চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর সমকোণে অবস্থান করে ফলে চাঁদের আকর্ষণে চাঁদের দিকে জোয়ার হয়। কিন্তু একই সময়ে সূর্যের আকর্ষণের জন্য এ জোয়ারের বেগ তত প্রবল হয় না। এরূপ জোয়ার কে মরা কটাল বলে। 

এক মাসে দুই বার ভরা কটাল ও দুই বার মরা কটাল হয়।।


জোয়ার ভাটার প্রভাবঃ



# অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের উপর জোয়ার ভাটার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে। 


## জোয়ার ভাটার স্রোতে নদী খাত গভীর হয়।

# জোয়ার ভাটার মাধ্যমে ভূখন্ড থেকে আবর্জনা নদীর মধ্য দিয়ে সমুদ্রে গিয়ে পতিত হয়।

# পৃথিবীর অনেক দেশে নদীতে ভাটার স্রোত কে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উ ৎপাদন করা হয়।

# জোয়ারভাটার ফলে নৌযান চলাচলের মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্য সুবিধা হয়।

## অমাবস্যা ও পুর্নিমা তিথিতে নদীতে জোয়ারের সময় বান ডাকার ফলে অনেক সময় নৌকা,  লঞ্চ প্রভৃতি ডুবে যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বানের ফলে  অনেক সময় নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়।

Arup

hi, I am ARUP SARDAR. I am a student at university of Barishal. My Department is Geology and Mining.

3 Comments

Previous Post Next Post